📅 Created: 17 Jul, 2024
🔄 Updated: 17 Jul, 2024

রাসূলদের নামের তালিকা (কোরআনে বর্ণিত) ?

Explanation

রাসূলদের নামের তালিকা (কোরআনে বর্ণিত) ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফে বহু রাসূলের নাম বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনের নাম কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে। এই ২৫ জন রাসূলের নাম ও তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. আদম (আ.)

আদম (আ.) ছিলেন প্রথম মানব এবং প্রথম নবী। আল্লাহ তাঁকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাঁর মধ্য দিয়ে মানবজাতির সূচনা হয়। আদম (আ.) কে জান্নাতে স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় তিনি নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেলেন, ফলে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়।

২. ইদ্রিস (আ.)

ইদ্রিস (আ.) ছিলেন আদম (আ.) এর বংশধর এবং নবীদের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি কোরআনে বর্ণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নবী ছিলেন এবং বলা হয়ে থাকে যে তিনি আকাশে তুলে নেওয়া হয়েছিলেন।

৩. নূহ (আ.)

নূহ (আ.) এর সময়ে মানুষ আল্লাহর উপাসনা ত্যাগ করে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ তাঁকে তাঁর জাতিকে সতর্ক করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জাতি অবাধ্য হয় এবং আল্লাহ একটি মহাপ্লাবন দিয়ে তাদের ধ্বংস করেন। নূহ (আ.) এর নৌকা দ্বারা তাঁর বিশ্বাসী অনুসারীরা রক্ষা পেয়েছিল।

৪. হুদ (আ.)

হুদ (আ.) ছিলেন আদ জাতির কাছে প্রেরিত একজন নবী। আদ জাতি শক্তিশালী এবং ধনী ছিল, কিন্তু তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়। হুদ (আ.) তাদের সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর কথা শোনেনি এবং আল্লাহ তাদের উপর ধ্বংস নেমে আসে।

৫. সালেহ (আ.)

সালেহ (আ.) ছিলেন সামুদ জাতির কাছে প্রেরিত। সামুদ জাতি মূর্তিপূজা করত এবং তারা অনেক সমৃদ্ধ ছিল। সালেহ (আ.) তাঁদের সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা অবাধ্য হয় এবং আল্লাহ তাদের উপর একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্প প্রেরণ করেন।

৬. ইব্রাহিম (আ.)

ইব্রাহিম (আ.) ছিলেন মহান নবী এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তিনি মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন এবং এক আল্লাহর উপাসনা প্রচার করেছিলেন। ইব্রাহিম (আ.) কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হলেও আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেছিলেন

তাঁর দুটি ছেলে ছিলেন ইসমাইল (আ.) এবং ইসহাক (আ.), যারা উভয়েই নবী ছিলেন।

৭. লুত (আ.)

লুত (আ.) ছিলেন ইব্রাহিম (আ.) এর ভাইপো এবং সাদোম ও গোমোরাহ শহরের বাসিন্দাদের কাছে প্রেরিত নবী। এই শহরগুলির মানুষ সমকামিতার অভ্যাসে লিপ্ত ছিল। লুত (আ.) তাদের সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা তাওবা করেনি এবং আল্লাহ তাদের উপর আযাব নেমে আসে।

৮. ইসমাইল (আ.)

ইসমাইল (আ.) ছিলেন ইব্রাহিম (আ.) এর বড় ছেলে এবং তাঁর মা ছিলেন হাজেরা। ইসমাইল (আ.) মক্কায় বসবাস করতেন এবং কাবা নির্মাণে তাঁর পিতাকে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ছিলেন মক্কার বনী ইসমাইল জাতির পূর্বপুরুষ।

৯. ইসহাক (আ.)

ইসহাক (আ.) ছিলেন ইব্রাহিম (আ.) এর ছোট ছেলে এবং তাঁর মা ছিলেন সারা। ইসহাক (আ.) ছিলেন বনী ইসরাঈল জাতির পূর্বপুরুষ এবং তাঁর পুত্র ইয়াকুব (আ.) ও একজন নবী ছিলেন।

১০. ইয়াকুব (আ.)

ইয়াকুব (আ.) ইসহাক (আ.) এর ছেলে এবং তিনি বনী ইসরাঈল জাতির নামকরণ করেন। ইয়াকুব (আ.) এর দ্বাদশ পুত্র ছিলেন, যারা বনী ইসরাঈল নামে পরিচিত।

১১. ইউসুফ (আ.)

ইউসুফ (আ.) ইয়াকুব (আ.) এর প্রিয় পুত্র ছিলেন এবং তাঁর জীবনী অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও শিক্ষামূলক। তাঁর ভাইয়েরা ঈর্ষাবশত তাঁকে কূপে ফেলে দেয়, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি মিশরে পৌঁছেন এবং সেখানে বড় পদে অধিষ্ঠিত হন।

১২. শু’আয়েব (আ.)

শু’আয়েব (আ.) ছিলেন মাদইয়ান জাতির কাছে প্রেরিত নবী। মাদইয়ান জাতি ব্যবসায়িক প্রতারণা করত এবং শু’আয়েব (আ.) তাদের সতর্ক করেছিলেন। তাঁরা অবাধ্য হয় এবং আল্লাহ তাদের উপর আযাব নেমে আসে।

১৩. মূসা (আ.)

মূসা (আ.) ছিলেন বনী ইসরাঈল জাতির কাছে প্রেরিত একজন মহান নবী। তিনি ফেরাউন থেকে বনী ইসরাঈলকে মুক্ত করেছিলেন এবং তাঁদেরকে তাওরাত প্রদান করেছিলেন। মূসা (আ.) এর জীবনী কোরআনে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

১৪. হারূন (আ.)

হারূন (আ.) ছিলেন মূসা (আ.) এর ভাই এবং তাঁর সহকারী নবী। তিনি মূসা (আ.) এর সাথে বনী ইসরাঈলকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করেছিলেন।

১৫. দাউদ (আ.)

দাউদ (আ.) ছিলেন বনী ইসরাঈলের একজন নবী এবং রাজা। তিনি জালুতের সাথে যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন এবং তাঁর রাজত্বকাল ছিল শান্তি ও সমৃদ্ধির সময়।

১৬. সুলাইমান (আ.)

সুলাইমান (আ.) ছিলেন দাউদ (আ.) এর পুত্র এবং তিনি একজন মহান নবী ও রাজা ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে বহু ক্ষমতা ও জ্ঞান দান করেছিলেন, এবং তিনি জিন ও পশুদের উপরও কর্তৃত্ব করতেন।

১৭. ইলিয়াস (আ.)

ইলিয়াস (আ.) ছিলেন বনী ইসরাঈলের একজন নবী। তিনি তাঁদেরকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে আল্লাহর উপাসনা করার জন্য আহ্বান করেছিলেন।

১৮. আল-ইয়াসা (আ.)

আল-ইয়াসা (আ.) ছিলেন ইলিয়াস (আ.) এর পরবর্তী নবী এবং বনী ইসরাঈলকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করেছিলেন।

১৯. ইউনুস (আ.)

ইউনুস (আ.) ছিলেন নবী এবং আল্লাহর হুকুম অমান্য করে এক সময় একটি শহর ত্যাগ করেছিলেন। পরে তিনি একটি মাছের পেটে আটকিয়ে ছিলেন এবং তাওবা করলে আল্লাহ তাঁকে মুক্তি দেন।

২০. জাকারিয়া (আ.)

জাকারিয়া (আ.) ছিলেন বনী ইসরাঈলের একজন নবী এবং ইয়া

২১. ইয়াহিয়া (আ.)

ইয়াহিয়া (আ.) ছিলেন জাকারিয়া (আ.) এর পুত্র এবং তিনি আল্লাহর নিকট প্রিয় নবী ছিলেন। ইয়াহিয়া (আ.) ন্যায় ও সততার প্রতীক ছিলেন এবং তিনি জনগণকে আল্লাহর পথে আসার জন্য আহ্বান করেছিলেন।

২২. ঈসা (আ.)

ঈসা (আ.) ছিলেন মাতা মেরির পুত্র এবং তিনি অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বনী ইসরাঈলকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেছিলেন এবং বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ঈসা (আ.) কে কোরআনে একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

২৩. মুহাম্মদ (সা.)

মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন শেষ নবী এবং আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল। তিনি মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ এবং কুরআন শরীফ তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান করেছেন।

২৪. ধুল-কিফ্ল (আ.)

ধুল-কিফ্ল (আ.) কোরআনে উল্লেখিত একজন নবী, যাঁর জীবনী বিস্তারিতভাবে কোরআনে বর্ণিত হয়নি। তবে তিনি ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা।

২৫. লোকমান (আ.)

লোকমান (আ.) কোরআনে উল্লেখিত একজন জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি আল্লাহর পথে পরিচালিত করার জন্য তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়েছিলেন। যদিও তিনি নবী ছিলেন না, তাঁকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়।

রাসূলদের এই তালিকা থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নবী প্রেরণ করেছেন। তাঁদের জীবনী থেকে আমরা অনেক শিক্ষণীয় বিষয় পেতে পারি, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযোজ্য। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ন্যায়পরায়ণতা, সহিষ্ণুতা এবং সততার গুরুত্ব আমাদের রাসূলদের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

ইসলামে, ২৫ জন নবীর নাম কোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাদের নামগুলি হল:

  1. আদম (আলাইহিস সালাম)
  2. নুহ (আলাইহিস সালাম)
  3. ইদরিস (আলাইহিস সালাম)
  4. হুদ (আলাইহিস সালাম)
  5. সালিহ (আলাইহিস সালাম)
  6. ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)
  7. ইসমাইল (আলাইহিস সালাম)
  8. ইসহাক (আলাইহিস সালাম)
  9. লূত (আলাইহিস সালাম)
  10. ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম)
  11. ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)
  12. শুয়াইব (আলাইহিস সালাম)
  13. মুসা (আলাইহিস সালাম)
  14. হারুন (আলাইহিস সালাম)
  15. ইলিয়াস (আলাইহিস সালাম)
  16. ইয়াসা (আলাইহিস সালাম)
  17. দাউদ (আলাইহিস সালাম)
  18. সুলাইমান (আলাইহিস সালাম)
  19. আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)
  20. ইউনুস (আলাইহিস সালাম)
  21. জুলকিফল (আলাইহিস সালাম)
  22. জাকারিয়া (আলাইহিস সালাম)
  23. ইয়াহইয়া (আলাইহিস সালাম)
  24. ঈসা (আলাইহিস সালাম)
  25. মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

এছাড়াও, কিছু হাদিসে আরও কিছু নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, তাদের নবুওয়ত সম্পর্কে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই।

মনে রাখবেন যে, নবী ও রাসূল একই নয়। রাসূল হলেন ঈশ্বরের পক্ষ থেকে মানুষকে নতুন ধর্মগ্রন্থ প্রদানকারী ব্যক্তি। অন্যদিকে, নবী হলেন ঈশ্বরের পক্ষ থেকে পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থের শিক্ষা প্রচারকারী ব্যক্তি।

ইসলামে, হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন শেষ নবী ও রাসূল।