📅 Created: 06 Sep, 2025
🔄 Updated: 06 Sep, 2025

১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ ?

Explanation

ভাইবোনেরা, এতগুলো ভাবসম্প্রসারণের মধ্যে থেকে কোনগুলো পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা বেছে নেওয়া সত্যিই কঠিন। কারণ, প্রায় সব ভাবসম্প্রসারণই কোনো না কোনো পরীক্ষায় এসেছে এবং আসে। তবে, কিছু ভাবসম্প্রসারণ আছে যেগুলো বারবার বিভিন্ন পরীক্ষায় আসে এবং বিষয়বস্তুগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ তুলে ধরা হলো:

১. স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
২. পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
৩. সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা
৪. শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড
৫. ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
৬. ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি
৭. জীবনের জন্য মৃত্যু, মৃত্যুর জন্য জীবন নয়
৮. অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে
৯. কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?
১০. গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়োজন


১. স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল

এই প্রবাদ বাক্যটি একটি শাশ্বত সত্য। এর অর্থ হলো, সুস্থ শরীর ও মনই জীবনের সমস্ত সুখের ভিত্তি। একজন মানুষের যতই ধন-সম্পদ, প্রতিপত্তি বা সাফল্য থাকুক না কেন, যদি সে অসুস্থ হয়, তবে তার পক্ষে কোনো কিছুই উপভোগ করা সম্ভব নয়। একজন অসুস্থ ধনী ব্যক্তির চেয়ে একজন সুস্থ দরিদ্র মানুষ অনেক বেশি সুখী হতে পারে। এই প্রবাদ আমাদের শেখায় যে, জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সুস্বাস্থ্য। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পরিমিত জীবনযাপনের মাধ্যমে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা উচিত। কারণ, সুস্বাস্থ্যই আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সুখ ও পূর্ণতা এনে দেয়।


২. পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

এই প্রবাদটি পরিশ্রম এবং সাফল্যের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক তুলে ধরে। 'প্রসূতি' শব্দের অর্থ হলো 'জন্মদাত্রী'। অর্থাৎ, এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় "পরিশ্রম হলো ভাগ্যের জন্মদাত্রী।" এটি বোঝায় যে, সাফল্য বা সৌভাগ্য কোনো দৈব ঘটনা নয়, বরং এটি কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং একনিষ্ঠ চেষ্টার ফল। একজন মানুষ যত বেশি পরিশ্রম করবে, তত বেশি তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এই প্রবাদ বাক্যটি আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় যে, ভাগ্য নয়, আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টাই আমাদের নিয়তি নির্ধারণ করে।


৩. সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা

এটি একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ যার অর্থ হলো "সততা হলো সবচেয়ে ভালো নীতি।" এই প্রবাদটি বোঝায় যে, সৎ থাকা এবং নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলা জীবনের সবচেয়ে কার্যকরী ও ফলপ্রসূ পথ। সাময়িক লাভের জন্য মিথ্যা বা অসৎ পথ অবলম্বন করা হলেও, তা শেষ পর্যন্ত সম্মান, বিশ্বাস ও সুনাম নষ্ট করে। একজন সৎ ব্যক্তি সকলের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অর্জন করে, যা যেকোনো ক্ষণস্থায়ী লাভের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। এই প্রবাদ আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে সততার সাথে কাজ করতে শেখায়, কারণ সততাই বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ভালো ইচ্ছার ভিত্তি স্থাপন করে।


৪. শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড

এই শক্তিশালী উক্তিটির অর্থ হলো, "শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ডের মতো।" যেমন একটি মেরুদণ্ড মানবদেহকে সুগঠিত ও দৃঢ় রাখে, তেমনি শিক্ষাই একটি সমাজকে জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে শক্তিশালী করে। একটি শিক্ষিত জাতি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করতে পারে। শিক্ষা মানুষকে চিন্তাভাবনার স্বাধীনতা দেয়, উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ায় এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। এই প্রবাদটি সার্বজনীন শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে এবং বোঝায় যে, একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল জাতি তার শিক্ষিত নাগরিকদের ওপর নির্ভরশীল।


৫. ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ

এই প্রবাদটি বোঝায় যে, "প্রকৃত সুখ বস্তুগত ভোগে নয়, বরং ত্যাগের মধ্যে নিহিত।" এটি সুখের বস্তুগত ধারণার বিপরীত। এটি বলে যে, ব্যক্তিগত ভোগ এবং সুখের পেছনে ছোটাছুটি কখনও স্থায়ী আনন্দ এনে দেয় না। বরং, অন্যকে কিছু দেওয়ার মধ্যে, নিঃস্বার্থ কাজ করার মধ্যে এবং ত্যাগের মাধ্যমে সত্যিকারের এবং গভীর আনন্দ পাওয়া যায়। যখন আমরা অন্যের কল্যাণের জন্য কিছু করি বা কিছু ত্যাগ করি, তখন আমরা এক গভীর পরিতৃপ্তি ও উদ্দেশ্য খুঁজে পাই, যা ব্যক্তিগত লাভের চেয়ে অনেক বড়। এই প্রবাদ আমাদের সহানুভূতিশীল হতে এবং অন্যের সেবা করার মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে উৎসাহিত করে।


৬. ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি

সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত এই কবিতার লাইনটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সর্বগ্রাসী রূপ তুলে ধরে। এর অর্থ হলো, "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী তার সমস্ত কাব্যিক সৌন্দর্য হারায়, আর পূর্ণিমার চাঁদও ঝলসানো রুটির মতো দেখায়।" এই অসাধারণ উপমাটি দেখায় যে, যখন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে, তখন প্রকৃতি বা সৌন্দর্য তার কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। একটি ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পূর্ণিমার চাঁদ, যা সাধারণত সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রতীক, তা কেবল এক টুকরো খাবার—একটি ঝলসানো রুটি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই লাইনটি গভীরভাবে বোঝায় যে, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে সে জীবনের কোনো সৌন্দর্য বা মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না।


৭. জীবনের জন্য মৃত্যু, মৃত্যুর জন্য জীবন নয়

এই দার্শনিক উক্তিটি বোঝায়, "মৃত্যু জীবনের জন্য, জীবন মৃত্যুর জন্য নয়।" এটি আমাদের জীবনের ভয় না পেয়ে জীবনকে পূর্ণভাবে উপভোগ করতে উৎসাহিত করে। প্রবাদটি বলে যে, মৃত্যু জীবনের একটি স্বাভাবিক ও অনিবার্য অংশ, যা জীবনের সার্থকতাকে আরও মূল্যবান করে তোলে। আমাদের উদ্দেশ্য মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া নয়, বরং আমাদের সীমিত সময়কে সার্থকভাবে, সাহসের সঙ্গে এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করা। এই প্রবাদটি আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণভাবে বাঁচতে এবং জীবনের শেষ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বর্তমানকে উপভোগ করতে উৎসাহিত করে।


৮. অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই শক্তিশালী পংক্তিটির অর্থ হলো, "যে অন্যায় করে এবং যে সেই অন্যায়কে সহ্য করে, তোমার ঘৃণা যেন তাদের উভয়কেই খড়কুটোর মতো জ্বালিয়ে দেয়।" এই লাইনটি বোঝায় যে, যে ব্যক্তি অন্যায় করে এবং যে ব্যক্তি নীরব থেকে সেই অন্যায়কে মেনে নেয়, তারা উভয়েই সমানভাবে দোষী। অন্যায়কে সহ্য করা এক ধরনের নীরব সমর্থন, যা অন্যায়কে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এই প্রবাদটি সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় নৈতিক অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানায়। এটি আমাদের শুধু অন্যায়কারীকে নিন্দা করতে নয়, বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এবং তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেও শেখায়।


৯. কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?

এই সুন্দর প্রবাদটি প্রশ্ন করে, "পদ্ম তুলতে গিয়ে কাঁটা দেখে কেন থেমে গেলে? এই পৃথিবীতে কি দুঃখ ছাড়া সুখ লাভ করা সম্ভব?" এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি যা বোঝায় যে, সাফল্য এবং আনন্দ পেতে গেলে কষ্ট, প্রচেষ্টা এবং বাধা অতিক্রম করতে হয়। কাঁটা এখানে জীবনের বাধা-বিপত্তিকে বোঝায়, আর পদ্ম হলো লক্ষ্য বা সাফল্য। এই প্রবাদ আমাদের শেখায় যে, বাধা দেখে হতাশ না হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, কারণ বড় কোনো সাফল্য কখনও সহজে আসে না।


১০. গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়োজন

এই প্রবাদটি বোঝায় যে, "বইয়ের মধ্যে থাকা জ্ঞান এবং অন্যের হাতে থাকা সম্পদ, প্রয়োজনের সময় তা জ্ঞানও নয়, সম্পদও নয়।" এটি বাস্তব জীবনের প্রয়োগযোগ্যতা এবং স্বনির্ভরতার ওপর জোর দেয়। যে জ্ঞান শুধুমাত্র বইয়ে লেখা থাকে কিন্তু আমরা তা আত্মস্থ বা প্রয়োগ করতে পারি না, তা প্রয়োজনের সময় কোনো কাজে আসে না। একইভাবে, অন্যের দখলে থাকা সম্পদও আমাদের বিপদের সময় কোনো কাজে আসে না। এই প্রবাদটি আমাদের শেখায় যে, জ্ঞানকে আমাদের প্রজ্ঞা হিসেবে ধারণ করতে হবে এবং আর্থিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে হবে। এর মূল বার্তা হলো, নিজের হাতে যা থাকে, কেবল তাই প্রকৃত সম্পদ।


  1. এই দশটি প্রবাদ বাক্য আমাদের জীবন, সমাজ এবং নৈতিকতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দেয়। এগুলো আমাদের শেখায় যে, সুস্বাস্থ্য, কঠোর পরিশ্রম, সততা এবং শিক্ষার মাধ্যমেই একটি সুন্দর ও সার্থক জীবন গড়া সম্ভব। একইসাথে, এগুলো আমাদের ত্যাগ, মানবতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রেরণা যোগায়। সংক্ষেপে, এই প্রবাদগুলো জীবনের চলার পথে আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।