বাংলাদেশের চলচিত্র শিল্পের ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। এটি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সামাজিক চেতনার প্রতিফলন। চলুন আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশে চলচিত্র শিল্পের বিবর্তন জানি।
১. বাংলাদেশ চলচিত্র সেন্সর বোর্ড
বাংলাদেশ চলচিত্র সেন্সর বোর্ড ১৯৫২ সালে গঠিত হয়। এটি দেশের চলচিত্র শিল্পের মান নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বোর্ডে মোট ১৫ জন সদস্য রয়েছেন এবং এদের অফিস ইস্কাটন, রমনায় অবস্থিত।
২. বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচিত্র
বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচিত্রের পরিচালক ছিলেন আবদুল জব্বার খান। তিনি বাংলা চলচিত্রের জনক হিসেবেও পরিচিত। পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের অংশ) প্রথম সবাক চলচিত্র ছিল “মুখ ও মুখোশ”, যা ৩ আগস্ট ১৯৫৬ সালে মুক্তি পায়।
উপমহাদেশের প্রথম সবাক চলচিত্র ছিল “জামাইষষ্ঠী”, এবং উপমহাদেশের চলচিত্রের জনক হিসেবে খ্যাত হীরালাল সেন।
৩. ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এটি দেশের চলচিত্র শিল্পকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত করানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
৪. সত্যজিৎ রায় ও তার চলচ্চিত্র
বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বাংলা চলচ্চিত্রের নাম “পথের পাঁচালি”, যা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত। সত্যজিৎ রায় তার চলচ্চিত্র দক্ষতার জন্য ১৯৯২ সালে বিশেষ অস্কার, অর্থাৎ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য অস্কার পুরস্কার লাভ করেন।
তার চলচ্চিত্র “অশনি সংকেত”-এ অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী ববিতা, যার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হন। এছাড়াও ববিতা বাংলা চলচিত্রের প্রথম অভিনেত্রী যিনি ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেছেন।
৫. বাংলা চলচিত্রের প্রথম অভিনেত্রী ও মুসলিম অভিনেত্রী
বাংলা চলচিত্রের প্রথম অভিনেত্রী ছিলেন পূর্ণিমা সেনগুপ্তা। প্রথম মুসলিম অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত হন বনানী চৌধুরী।
৬. অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র
-
কাজী নজরুল ইসলাম: প্রথম মুসলিম চলচিত্রকার।
-
তারেক মাসুদ: “মাটির ময়না” চলচ্চিত্রের নির্মাতা।
-
তানভীর মোকাম্মেল: “চিত্রা নদীর পাড়ে” চলচ্চিত্রের নির্মাতা।
বাংলাদেশের চলচিত্র ইতিহাস কেবল একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজকের দিনেও এই শিল্প নতুন দিশা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক গর্ব বৃদ্ধি করছে।
১. বাংলাদেশ চলচিত্র সেন্সর বোর্ড কবে গঠিত হয়?
বাংলাদেশ চলচিত্র সেন্সর বোর্ড ১৯৫২ সালে গঠিত হয়। দেশের চলচিত্র শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ, মান নির্ধারণ এবং দর্শকদের জন্য নৈতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য বোর্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি চলচিত্রগুলোর বিষয়বস্তু পরীক্ষা করে এবং দেখার উপযুক্ততা নির্ধারণ করে।
২. বাংলাদেশ চলচিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য কত?
বাংলাদেশ চলচিত্র সেন্সর বোর্ডে মোট ১৫ জন সদস্য থাকে। এই সদস্যরা চলচ্চিত্র এবং সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বোর্ডের কাজ পরিচালনা করেন।
৩. বাংলাদেশ চলচিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য কোথায়?
বোর্ডের সদর দপ্তর ইস্কাটন, রমনা এলাকায় অবস্থিত। এটি ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক এলাকা, যা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত।
৪. বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচিত্রের পরিচালক কে?
বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচিত্রের পরিচালক ছিলেন আব্দুল জব্বার খান। তিনি দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।
৫. স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয় কবে?
স্বাধীনতার পর, ১৯৮১ সালে ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবটি দেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত করানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
৬. উপমহাদেশের চলচিত্রের জনক কে?
উপমহাদেশের চলচিত্রের জনক হিসেবে পরিচিত হীরালাল সেন। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের সূচনা করেছেন এবং চলচ্চিত্র শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৭. বাংলাদেশের চলচিত্রের জনক কে?
বাংলাদেশের চলচিত্র শিল্পের জনক ছিলেন আব্দুল জব্বার খান। তিনি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন।
৮. উপমহাদেশের প্রথম সবাক চলচিত্রের নাম কী?
উপমহাদেশের প্রথম সবাক চলচিত্রের নাম “জামাইষষ্ঠী”। এটি উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
৯. সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম ছবি কোনটি?
প্রখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি হলো “পথের পাঁচালি”। এটি বাংলা চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি দেয় এবং রায়ের সিনেমাটিক স্টাইলের সূচনা করে।
১০. সত্যজিৎ রায় কত সালে অস্কার পুরস্কার পান?
সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালে বিশেষ অস্কার (Special Academy Award) লাভ করেন। এটি তাকে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে সম্মানিত করে।
১১. বাংলা ভাষায় নির্মিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচিত্র কোনটি?
“পথের পাঁচালি” হলো বাংলা ভাষায় নির্মিত সেই চলচ্চিত্র যা আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে। এর গল্প, অভিনয় এবং দার্শনিক দৃষ্টিকোণ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।
১২. সত্যজিৎ রায়ের কোন বিভাগে অস্কার পুরস্কার পান?
সত্যজিৎ রায় লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য বিশেষ অস্কার পান। এটি তার চলচ্চিত্র শিল্পে অবদানের স্বীকৃতি।
১৩. সত্যজিৎ রায়ের কোন ছবিতে অভিনয় করে বাংলাদেশের অভিনেত্রী ববিতা আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হন?
বাংলাদেশের অভিনেত্রী ববিতা আন্তর্জাতিক সম্মান লাভ করেন চলচ্চিত্র “অশনি সংকেত”-এ অভিনয় করে।
১৪. বাংলা চলচিত্রের কোন অভিনেত্রী ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন?
বাংলা চলচিত্রের অভিনেত্রী ববিতা তার চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।
১৫. বাংলা চলচিত্রের প্রথম অভিনেত্রী কে?
বাংলা চলচিত্রের প্রথম অভিনেত্রী ছিলেন পূর্নিমা সেনগুপ্তা। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত হন।
১৬. বাংলা চলচিত্রের প্রথম মুসলমান অভিনেত্রী কে?
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মুসলমান অভিনেত্রী ছিলেন বনানী চৌধুরী। তিনি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
১৭. পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচিত্রের নাম কী?
পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের নাম “মুখ ও মুখোশ”। এটি পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
১৮. মুখ ও মুখোশ চলচিত্র মুক্তি পায় কবে?
“মুখ ও মুখোশ” চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ৩ আগস্ট ১৯৫৬ সালে।
১৯. প্রথম মুসলমান চলচিত্রকার কে?
প্রথম মুসলমান চলচ্চিত্রকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
২০. মাটির ময়না এবং চিত্রা নদীর পাড়ে চলচ্চিত্রের নির্মাতা
-
মাটির ময়না চলচ্চিত্রের নির্মাতা ছিলেন তারেক মাসুদ।
-
চিত্রা নদীর পাড়ে চলচ্চিত্রের নির্মাতা ছিলেন তানভীর মোকাম্মেল।