📅 Created: 16 Jul, 2024
🔄 Updated: 16 Jul, 2024

ফ্রিজবিহীন সমাজের অদ্ভুত অভিজ্ঞতা, ফ্রিজ না থাকলে কি উপকার হয়? ?

Explanation

ফ্রিজবিহীন সমাজের অদ্ভুত অভিজ্ঞতা, ফ্রিজ না থাকলে কি উপকার হয়? ইরানে একবার: ফ্রিজবিহীন সমাজের অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আমার জীবনের একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতার কথা বলব আজ। কয়েক বছর আগে ইরানের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় যাই, যেখানে গিয়ে এমন কিছু দেখলাম এবং শিখলাম যা আমার জীবনদর্শনকে একদম পাল্টে দিয়েছে। ঘটনাটি এমন যে, আমি ইরানের একটি গ্রামে গিয়ে দেখলাম যে, সেখানকার কোনো বাড়িতে ফ্রিজ নেই। যেই ঘরে আমি মেহমান হয়েছিলাম, তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনাদের ঘরে ফ্রিজ নেই কেন?” উত্তর শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। তারা বলল, “আমরা ঘরে ফ্রিজ থাকাকে গোনাহ মনে করি।”

কেন ফ্রিজ গোনাহ?

আমার কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?” মেযবান একটু চিন্তা করে বললেন, “শাহে ইরানের শাসনকালে রাষ্ট্র জনগণকে ফ্রিজ কিনতে উৎসাহ দিত। স্বল্পমূল্যে কিস্তিতে ফ্রিজ, টিভি, অনেক কিছু মিলত। মানুষও ব্যাপকহারে ফ্রিজ কিনল।” তিনি বলতে লাগলেন, “কিছুদিন পর আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত খাবারগুলো অনাহারীকে না বিলিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। আগে অতিরিক্ত খাবার অভাবীদের মধ্যে দান করে দিতাম বা প্রতিবেশীর ঘরে পাঠিয়ে দিতাম, তারাও আমাদের ঘরে পাঠাতেন। ফ্রিজ ওই দান আর প্রীতির ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দিল।”

ইমামের ঘোষণা

তিনি আরও বললেন, “পরে একদিন আমাদের জামে মসজিদের ইমাম সাহেব পুরুষ-মহিলা সকলকে সামনের জুমুআয় হাজির হতে বললেন। তিনি সামাজিক বন্ধন ও প্রীতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে ফ্রিজকে হারাম ঘোষণা করলেন। আমরা সারা এলাকাবাসী ফ্রিজ বিক্রি করে ফেললাম। আলহামদুলিল্লাহ, আবার আমাদের সেই পরিবেশ ফিরে এল। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের এলাকায় আর ফ্রিজ ঢুকেনি।”

সামাজিক বন্ধন ও মানবতা

আমি আরও জানতে চাইলাম, “তাহলে এতে কী ফায়দা হল?” মেযবান বললেন, “সবচে বড় যে ফায়দাটা হয়েছে তা হল, আমাদের এলাকায় কেউ এখন ক্ষুধার্ত থাকে না, অনাহারে কেউ রাত কাটায় না।” তার এই কথা শুনে আমার মন গভীরভাবে ভাবনায় ডুবে গেল। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা অনেক সুবিধা পাই, কিন্তু তার সঙ্গে কিছু অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনও ঘটে যা আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

ফ্রিজের ভূমিকা

ফ্রিজ আমাদের জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি খাবার সংরক্ষণে সাহায্য করে এবং আমাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করে। কিন্তু ইরানের এই গ্রামের অভিজ্ঞতা আমাকে শেখালো যে, প্রযুক্তির ব্যবহারেও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা সম্ভব। আমাদের সবার উচিত সমাজে মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা এবং অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসা।

পরিবর্তনের গল্প

ইরানের এই গ্রামের গল্প একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তারা ফ্রিজ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে শুধুমাত্র সামাজিক বন্ধন এবং মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য। আমাদের সমাজেও এমন কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে যা আমাদেরকে আরও মানবিক এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলবে।

উপসংহার

ইরানের এই গ্রামের অভিজ্ঞতা আমাকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করেও আমরা মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে পারি এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারি। ফ্রিজবিহীন এই সমাজ আমাদের শেখায় যে, আসল সম্পদ প্রযুক্তি নয়, বরং মানবিকতা। আমাদের সবার উচিত প্রযুক্তির ব্যবহার করে আরও মানবিক সমাজ গঠন করা, যেখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, কেউ অনাহারে রাত কাটাবে না।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

ফ্রিজবিহীন এই সমাজের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ছিল বেশ ইতিবাচক। মানুষ আবার একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছিল। সমাজে এক ধরনের পারস্পরিক সহায়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যখন কোনো বাড়িতে খাবার বেশি হয়ে যেত, তখন তা প্রতিবেশীর মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হতো। এটি একটি সুন্দর সামাজিক বন্ধনের উদাহরণ।

ব্যক্তিগত উপলব্ধি

এই অভিজ্ঞতা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে, প্রযুক্তির অন্ধ ব্যবহার কেবলমাত্র আমাদের জীবনকে সহজ করে না, বরং আমাদের মানবিক মূল্যবোধও পরিবর্তন করে দেয়। আমাদের উচিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা, কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদের মানবিক দায়িত্বও মনে রাখা।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে

আমাদের সমাজে প্রযুক্তির ব্যবহারে এই ধরনের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করতে পারলে আমরা একটি সুন্দর এবং সহানুভূতিশীল সমাজ গঠন করতে পারব। ইরানের এই গ্রামের অভিজ্ঞতা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে, প্রযুক্তির বাইরেও মানবিকতা এবং পারস্পরিক সহানুভূতির মূল্য অনেক বেশি।

ইরানে আমার এই অভিজ্ঞতা একটি জীবনের শিক্ষা হয়ে থাকবে এবং আমি আশা করি এই গল্পটি পড়ে অন্যরাও একই শিক্ষা নিতে পারবে।