📅 Created: 25 Aug, 2024
🔄 Updated: 25 Aug, 2024

পড়িলে বই আলোকিত হই না পড়িলে বই অন্ধকারে ?

Explanation

পড়িলে বই আলোকিত হই না পড়িলে বই অন্ধকারে মানুষের জীবনে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বই শুধুমাত্র জ্ঞানার্জনের একটি মাধ্যম নয়, এটি মানবিক গুণাবলির বিকাশ, মননশীলতার উন্নতি, এবং জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীরতর ধারণা লাভে সহায়ক। যারা বই পড়েন তারা তাদের মনকে আলোকিত করতে সক্ষম হন, আর যারা বই পড়েন না তারা মানসিক অন্ধকারে নিমজ্জিত হন। এই নিবন্ধে আমরা বই পড়ার গুরুত্ব, এর উপকারিতা এবং না পড়ার পরিণতি নিয়ে আলোচনা করব।

১. জ্ঞানের উৎস হিসাবে বই

বই হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব ধরনের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, এবং চিন্তাধারা বইয়ের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। একজন ব্যক্তি যখন বই পড়েন, তখন তিনি শুধুমাত্র লেখকের জ্ঞানই লাভ করেন না, বরং লেখকের অভিজ্ঞতা ও চিন্তাধারাও জানতে পারেন। এভাবে, একজন পাঠক অনেক ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন, যা তাকে আলোকিত করে তোলে।

২. মানবিক গুণাবলির বিকাশ

বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, উপন্যাস এবং গল্প পড়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন চরিত্রের জীবনের কাহিনী জানি, যা আমাদের সহানুভূতি, সহমর্মিতা এবং নৈতিকতার বিকাশে সহায়ক। ইতিহাস পড়ার মাধ্যমে আমরা অতীতের মহান ব্যক্তিত্বদের জীবনী জানি, যা আমাদেরকে নৈতিকতা, সাহস, এবং উদ্দীপনা প্রদান করে।

৩. মননশীলতার উন্নতি

বই পড়া মানসিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা বাড়ে। বৈজ্ঞানিক বই পড়ার মাধ্যমে আমরা বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারি, যা আমাদের যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলে।

৪. জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ

বই পড়ার মাধ্যমে আমরা জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীরতর ধারণা লাভ করতে পারি। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান, এবং দর্শন বিষয়ে লেখা বই পড়ার মাধ্যমে আমরা সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারি। এর ফলে আমরা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধান সম্পর্কে সচেতন হতে পারি।

৫. সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তির বিকাশ

বই পড়া সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তির বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত শিশুদের জন্য গল্পের বই পড়া তাদের কল্পনাশক্তিকে উদ্দীপিত করে। গল্প পড়ার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি এবং চরিত্র সম্পর্কে কল্পনা করতে শেখে, যা তাদের সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়ক।

৬. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

বই পড়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এটি মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক এবং মনের শান্তি আনে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে মানসিক অবসাদ এবং উদ্বেগ কমানো যায়। এছাড়াও, বই পড়া মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।

৭. নতুন দিগন্তের উন্মোচন

বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারি। ভ্রমণবিষয়ক বই পড়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি। এভাবে, আমাদের জ্ঞান এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্প্রসারিত হয়।

৮. ভাষা এবং যোগাযোগ দক্ষতার উন্নতি

বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের ভাষা এবং যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত হয়। বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নতুন শব্দ এবং বাক্য গঠন শিখতে পারি। এভাবে, আমাদের লেখার এবং বলার ক্ষমতা উন্নত হয়, যা আমাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে সহায়ক।

৯. না পড়ার পরিণতি

যারা বই পড়েন না তারা মানসিক অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকেন। বই পড়ার অভাবের কারণে তাদের জ্ঞান সীমিত থাকে এবং তারা জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীরতর ধারণা লাভ করতে পারেন না। এছাড়াও, বই না পড়ার ফলে তাদের মননশীলতা, সৃজনশীলতা এবং ভাষা দক্ষতা কমে যায়।

১০. উপসংহার

বই পড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস, যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিক উন্নত করতে সহায়ক। এটি আমাদের জ্ঞান, মানবিক গুণাবলি, মননশীলতা, এবং সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়ক। যারা নিয়মিত বই পড়েন তারা তাদের মনকে আলোকিত করতে সক্ষম হন, আর যারা বই পড়েন না তারা মানসিক অন্ধকারে নিমজ্জিত হন। তাই, আমাদের উচিত নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং অন্যদেরকেও বই পড়তে উৎসাহিত করা।

 

ভাবসম্প্রসারণ: “পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে”

মুলভাব : বই মানুষের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। এটি জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির এক অমূল্য ভাণ্ডার। একটি ভালো বই যেমন পাঠককে নতুন জ্ঞান, ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচয় করায়, তেমনি মননশীলতার বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রবাদবাক্য “পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে” প্রমাণ করে যে বই পাঠ করা মানুষের জীবনে আলোর রশ্মির মতো কাজ করে এবং বই না পড়া মানুষদের জন্য অন্ধকারের সমান।

সম্প্রসারিত ভাবঃ

প্রথমত, বই পাঠ করার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে। জ্ঞানের আলো মানুষের জীবনকে আলোকিত করে তোলে। বই মানুষকে বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দেয়। যে ব্যক্তি নিয়মিত বই পড়ে, তার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি অনেক উজ্জ্বল এবং উদার হয়। তিনি নিজের জীবনের পাশাপাশি সমাজেরও উপকারে আসতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন চিকিৎসক যখন রোগ নির্ণয় করতে চান, তখন তার পাঠ করা বইয়ের জ্ঞান তাকে সাহায্য করে। তেমনিভাবে, একজন বিজ্ঞানী যখন কোনো গবেষণা করেন, তখন তার অর্জিত জ্ঞান তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়ত, বই মানুষের মনোজগতকে সমৃদ্ধ করে। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ নতুন ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে, যা তার মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। একটি ভালো উপন্যাস বা গল্প পাঠককে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করে তোলে এবং তাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এটি মানুষের চিন্তাশক্তিকে উন্নত করে এবং তাকে ক্রিয়েটিভ করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস “গোরা” আমাদের সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এছাড়া, সৈয়দ মুজতবা আলীর “দেশে বিদেশে” বইটি আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানায় এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশস্ত করে।

তৃতীয়ত, বই মানুষকে মানসিক শক্তি প্রদান করে। জীবনের কঠিন সময়ে বই মানুষের সঙ্গী হয়ে উঠে এবং তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে। বিভিন্ন আত্মজীবনী বা অনুপ্রেরণামূলক বই মানুষের জীবনকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করে এবং তাকে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় উৎসাহিত করে। উদাহরণস্বরূপ, হেলেন কেলার এর “দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ” বইটি মানুষের জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং তাকে সংগ্রামী হতে অনুপ্রাণিত করে।

অন্যদিকে, যারা বই পড়ে না, তাদের জীবন অনেকটাই অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। বই না পড়ার কারণে তারা নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পারে না এবং তাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি সীমিত থাকে। তারা জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ পায় না এবং তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। বই না পড়ার কারণে তাদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং তারা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।

মন্তব্য :

সর্বশেষে, বলা যায় যে, বই মানুষের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ এবং এটি মানুষের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। “পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে” এই প্রবাদবাক্যটি প্রমাণ করে যে, বই পড়া মানুষের জীবনে আলোর মতো কাজ করে এবং বই না পড়া মানুষের জীবনের অন্ধকারের সমান। তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত বই পড়া এবং নিজেদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করা।

Related Questions

দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ এটি কোন দেশের প্রবাদ

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ভাব সম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণ যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেখেছ যারে,...

যেমন কর্ম তেমন ফল ভাবসম্প্রসারণ

সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড় ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণ কত বড়ো আমি, কহে নকল হীরাটি-, তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি

ভাবসম্প্রসারণ বিশ্বজোড়া পাঠশালা মাের সবার আমি ছাত্র, নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি...

নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো

স্বদেশের উপকারে নেই যার মন ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণ দুঃখ যে পাপের ফল তাহা কে বলিল, পুণ্যের ফলও হইতে পারে, কত ধর্মাত্মা...